ঢাকা, ১৩ এপ্রিল ২০২০ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): মানুষের জন্য, দেশের জন্য। এই স্লোগান নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। যেকোনো সংকটে এগিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। দাঁড়ায় মানুষের পাশে। দেশের পাশে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বড় কোনো দুর্ঘটনা কিংবা শিক্ষার প্রসার— সাহায্য, সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় বসুন্ধরা গ্রুপ। কখনো নগদ অর্থ, কখনো খাদ্যসামগ্রী, কখনো চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে এগিয়ে যায় অসহায়ের পাশে। প্রাতিষ্ঠানিক সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) পালনে বরাবরই প্রথম সারিতে দেশের প্রতিষ্ঠিত এই শিল্পগোষ্ঠী। বিশ্বময় মহামারি আকার নিয়েছে করোনাভাইরাস। ছড়িয়েছে বাংলাদেশেও। ১২ এপ্রিল রবিবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছয় শর ঘর পেরিয়েছে। মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ত্রিশের ঘরে। করোনা ঠেকাতে কার্যত লকডাউনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এই দুর্যোগ মুহূর্তেও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। নগদ অর্থ, খাদ্য, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থায়।
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে গত ২৯ মার্চ ১০ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। উপস্থিত ছিলেন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান তাসভীরও। এ সময় বসুন্ধরার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বসুন্ধরার চারটি কনভেনশন সেন্টার ও একটি ট্রেড সেন্টার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন এবং চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রয়োজনে সেখানে পাঁচ হাজার শয্যার হাসপাতাল গড়ে দেওয়ারও প্রস্তাব দেওয়া হয়। দেশের দুর্যোগের সময় বসুন্ধরা গ্রুপের এই প্রস্তাবটি আন্তর্জাতিক মহলেও সমাদৃত হয়েছে। আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদপত্র খালিজ টাইমসেও ফলাও করে প্রচার হয় খবরটি।
হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান আন্তর্জাতিক এই গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেয়া করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেরও একতাবদ্ধ হতে হবে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি কনভেনশন সেন্টারকে হাসপাতালে রুপান্তরিত করার। সেখানে করোনার পরীক্ষা এবং রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য।’
বসুন্ধরার প্রস্তাব অনুযায়ী এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণের কাজ। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) অস্থায়ী হাসপাতাল ১৫ দিনের মধ্যেই চালু করা যাবে। বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে আইসিইউর কিছু সরঞ্জাম। ৫০০০ বেড তৈরির পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখানে ৭১টি নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) ও দুই হাজার বেডের হাসপাতাল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হাসপাতালের জন্য ডাক্তার, নার্স, সার্পোটিং স্টাফ, ওষুধ ও অন্য জিনিসপত্র দিচ্ছে সরকার।
এছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপ প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষা সরঞ্জাম ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর আওতাধীন সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদপ্তরকে এক হাজার ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ও ৫০ হাজার মাস্ক দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক উত্তর বিভাগকে ২৫ হাজার মাস্ক, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) ৫০ হাজার মাস্ক ও চারটি ট্রাকে মোট এক হাজার ৪০০ প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী হস্তান্তর করেছে বসুন্ধরা।
এছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ৫০ হাজার মাস্ক, ৫০০ পিপিই ও দুই ট্রাক (৭০০ প্যাকেট) খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে বসুন্ধরা। ডিএমপির কমিশনারের হাতেও পুলিশের জন্য ৫০ হাজার মাস্ক তুলে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধরা।
এছাড়া এই দুর্যোগেও যারা প্রতিদিন সকালে মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিচ্ছে খবরের কাগজ, সেই হকারদের প্রতিও বসুন্ধরা গ্রুপ বাড়িয়ে দিয়েছে সহযোগিতার হাত। সংবাদপত্র বিতরণের সঙ্গে জড়িত দুই হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে দেশের এ শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী।
বসুন্ধরা গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, এই সহায়তার বাইরেও ঢাকা, উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কম আয়ের অসহায় ও অতিদরিদ্র মানুষকে নিয়মিত খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। শিল্পগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন- বসুন্ধরা সিমেন্ট, মেঘনা সিমেন্ট মিলস লিমিটেড (কিং ব্র্যান্ড সিমেন্ট), বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, বসুন্ধরা এলপি গ্যাস, ইস্ট-ওয়েস্ট প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট (ইডব্লিউপিডি), বসুন্ধরা পেপার মিলসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে হতদরিদ্র মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে বসুন্ধরা গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের উপদেষ্টা (প্রেস ও মিডিয়া) আবু তৈয়ব বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ কেবল ব্যবসার মানসিকতা নিয়ে যাত্রা করেনি, পাশাপাশি মানুষের সেবার মনোভাব নিয়ে এই শিল্পগোষ্ঠী এগিয়ে যাচ্ছে। যখনই জাতীয় জীবনে কোনো দুর্যোগ দেখা দিয়েছে, বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে গিয়েছে। এখনো তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।’
তিনি জানান, করোনা মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার ডাকে সাড়া দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে এসেছে। আর্ত-মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে।
আবু তৈয়ব জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বসুন্ধরার বিভিন্ন কারখানা, উৎপাদন কেন্দ্র বা সাইটগুলোতে কর্মরত কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদের মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই, হ্যান্ডস্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের খাবারও দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। কারখানাগুলোতেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা।
শুধু করোনা সংকটকালই নয়, অতীতেও বিভিন্ন নানা দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় মানুষের পাশে ছিল বসুন্ধরা। শীতে কষ্ট পাওয়া দুস্থ মানুষের পাশেও ছিল শীর্ষ স্থানীয় এই শিল্পগোষ্ঠী। সারাদেশে শীতার্থ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র ও কম্বল বিতরণ করে আসছে বছরের পর বছর ধরে।
বসুন্ধরা গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগে রেল দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের পাশে অর্থ-সাহায্য নিয়ে দাঁড়িয়েছিল বসুন্ধরা গ্রুপ।
নারীর ক্ষমতায়ন ও বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখছে বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের বিনাসুদে ঋণ সহায়তাও দিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এমনকি এই ঋণ আদায়েও কোনো ধরনের কঠোর শর্ত নেই। ফলে আদায়ের হারও শতভাগ। এই মুহূর্তে ২০ কোটি টাকার বেশি ঋণ সহায়তা মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে আছে।
এছাড়া সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচিকে সহায়তার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যাহ্নে খাবার বা মিডডে মিল সরবরাহ করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। ঢাকার বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বিভিন্ন শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে মিডডে মিল দিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এটিও দীর্ঘদিন ধরে চলমান কার্যক্রম।
ঢাকায় যখন ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল সেই সময়েও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বিশেষ কার্যক্রম চালু রেখেছে বসন্ধুরা গ্রুপ।
সব মিলিয়ে দেশের বড় শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে বসুন্ধরার এসব সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কার্যক্রম সব মহলেই প্রশংসিত হচ্ছে। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, ‘সমাজের অসহায়, গরিব, দুঃখী মানুষের কল্যাণের জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসা জরুরি। বসুন্ধরা গ্রুপ যে কাজ করে যাচ্ছে, এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তাদের মতো দেশের অন্যান্য বড় শিল্পগোষ্ঠীও এগিয়ে এলে মানুষ আরও উপকৃত হবে।’
Leave a Reply